1️⃣ কম্পিউটার বিষয়ক প্রশ্ন (শিক্ষার্থীরা নিজেই উত্তর দিবে)
(ক) তুমি কি কম্পিউটার চিনো?
(খ) কম্পিউটার কি কাজে ব্যবহৃত হয়?
(গ) তুমি কোথায় এবং কি কি কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করেছো এবং ব্যবহার করতে দেখেছো?
(ঘ) কম্পিউটার সম্পর্কে তুমি কি কি জানো বলো।
2️⃣ কম্পিউটপার কি এবং কি কি কাজে ব্যবহৃত হয়?
(ক) কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা বিভিন্ন ধরনের তথ্য (ডাটা) গ্রহণ করে, সেটি প্রক্রিয়াজাত (process) করে এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী ফলাফল প্রদান করে। এটি দ্রুত গাণিতিক এবং যৌক্তিক কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম।
(খ) কম্পিউটার কি কাজে ব্যবহৃত হয়?
কম্পিউটার আজকের যুগে বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোকে সহজ ও কার্যকর করেছে।
নিচে কম্পিউটার ব্যবহারের প্রধান ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করা হলো:
- অনলাইন ক্লাস এবং ই-লার্নিং।
- গবেষণা এবং প্রজেক্ট কাজ।
- ডিজিটাল লাইব্রেরি এবং শিক্ষা সফটওয়্যার।
- শিক্ষার্থীদের জন্য টাইপিং বা কম্পিউটার দক্ষতা উন্নয়ন।
- ডাটা সংরক্ষণ এবং ম্যানেজমেন্ট (Database)।
- হিসাব-নিকাশ এবং অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার।
- ই-মেইল এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগাযোগ।
- ডিজিটাল মার্কেটিং এবং অনলাইন বিক্রয়।
- রোগীর রেকর্ড সংরক্ষণ।
- ডায়াগনস্টিক মেশিন চালানো।
- অনলাইনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ।
- ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য সফটওয়্যার।
- মুভি দেখা এবং গান শোনা।
- গেম খেলা।
- ভিডিও এডিটিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন।
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার।
- ই-মেইল, চ্যাটিং এবং ভিডিও কল।
- সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট (Facebook, WhatsApp)।
- অনলাইন মিটিং (Zoom, Microsoft Teams)।
- গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং।
- মহাকাশ অনুসন্ধান এবং স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ।
- বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ডিভাইস তৈরি ও পরীক্ষা।
- জনসেবা পরিচালনা (ডিজিটাল সেবা)।
- রেকর্ড সংরক্ষণ এবং ডাটা বিশ্লেষণ।
- নির্বাচন প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন।
- কর এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন ম্যানেজমেন্ট।
- অনলাইন লেনদেন (Net Banking, Mobile Banking)।
- অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট।
- এটিএম পরিচালনা।
- স্টক মার্কেট এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেড।
- রেলওয়ে, বিমান এবং বাস টিকিট বুকিং।
- জিপিএস এবং ন্যাভিগেশন।
- ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ।
- লজিস্টিক এবং শিপিং ম্যানেজমেন্ট।
- বাজেট এবং ঘরোয়া হিসাব রাখা।
- অনলাইনে কেনাকাটা।
- রেসিপি বা অন্যান্য টিউটোরিয়াল দেখা।
- ব্যক্তিগত ব্লগিং বা ভ্লগিং।
3️⃣ কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফ্টয়্যার কি?
কম্পিউটাকে সাধারণ দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। গাঠনিক অর্থাৎ হার্ড অংশগুলো হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার অর্থাৎ যা মুলত: ধরা-ছোয়া না গেলেও বিভিন্ন ধরনের কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় সেগুলো সফ্টোয়্যার।
(ক) কম্পিউটার হার্ডওয়্যার (Hardware): কম্পিউটারের শারীরিক অংশ যা দেখা এবং স্পর্শ করা যায়। এটি কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং যন্ত্রাংশগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরির মাধ্যমে কাজ করে।
যেমন: কীবোর্ড, মাউস, মনিটর ইত্যাদি।
(খ) কম্পিউটার সফটওয়্যার (Software): সফটওয়্যার হলো এক বা একাধিক প্রোগ্রামের সমষ্টি যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন কাজ করতে সাহায্য করে। সফটওয়্যার স্পর্শ করা যায় না; এটি শুধুমাত্র কাজের মাধ্যমে দেখা যায়।
যেমন: Windows, MS Word, MS Excel, Photoshop, Bijoy ইত্যাদি।
(গ) কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফ্টয়্যার মধ্যে পার্থক্য কি?
4️⃣ হার্ডওয়্যার এর প্রকারভেদ
কাজ এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে হার্ডওয়্যারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হযেছে।
ইনপুট ডিভাইস (Input Devices): এই ডিভাইসগুলো ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ডাটা সংগ্রহ করে।
- কীবোর্ড (Keyboard)
- মাউস (Mouse)
- স্ক্যানার (Scanner)
- মাইক্রোফোন (Microphone)
- ওয়েবক্যাম (Webcam)
- জয়স্টিক (Joystick)
- ট্র্যাকপ্যাড (Trackpad)
- বারকোড রিডার (Barcode Reader)
- ডিজিটাল পেন (Digital Pen)
- টাচস্ক্রিন (Touch Screen)
আউটপুট ডিভাইস (Output Devices): এই ডিভাইসগুলো প্রসেস করা তথ্য ব্যবহারকারীর কাছে প্রদর্শন করে।
প্রসেসিং ডিভাইস (Processing Devices): এগুলো কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ কাজ পরিচালনা করে।
মেমরি ডিভাইস (Memory Devices): ডাটা সাময়িক বা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- র্যাম (RAM - Random Access Memory)
- রম (ROM - Read Only Memory)
- ক্যাশ মেমরি (Cache Memory)
- ভিআরএম (VRAM - Video RAM)
স্টোরেজ ডিভাইস (Storage Devices): ডাটা দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- হার্ড ড্রাইভ (HDD - Hard Disk Drive)
- সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD - Solid State Drive)
- পেনড্রাইভ (Pen Drive)
- মেমরি কার্ড (Memory Card)
- অপটিক্যাল ড্রাইভ (CD/DVD Drive)
- নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ (NAS - Network Attached Storage)
মাদারবোর্ড ও সংযোগকারী ডিভাইস (Motherboard and Connectors):
পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট (Power Supply Unit):
কুলিং ডিভাইস (Cooling Devices):
নেটওয়ার্কিং ডিভাইস (Networking Devices):
ইনপুট/আউটপুট কম্বো ডিভাইস:
কিছু ডিভাইস ইনপুট এবং আউটপুট উভয়ই দিতে পারে।
- টাচস্ক্রিন মনিটর (Touchscreen Monitor)
- ভিআর হেডসেট (VR Headset)
- স্মার্টফোন (Smartphone)
- 2-in-1 ল্যাপটপ (2-in-1 Laptop)
অন্যান্য যন্ত্রাংশ:
- সাউন্ড কার্ড (Sound Card)
- গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics Card)
- থার্মাল পেস্ট (Thermal Paste)
- কেসিং (Casing)
- LED লাইট (RGB Lights)
5️⃣ সফ্টওয়্যার এর প্রকারভেদ
সফ্টওয়্যার প্রধানত তিনটি বিভাগে বিভক্ত:
(ক) সিস্টেম সফ্টওয়্যার (System Software): সিস্টেম সফ্টওয়্যার কম্পিউটারের মৌলিক কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং হার্ডওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।উদাহরণ:
- অপারেটিং সিস্টেম (Operating System): Windows, macOS, Linux।
- ইউটিলিটি সফ্টওয়্যার (Utility Software): অ্যান্টিভাইরাস, ডাটা ব্যাকআপ সফ্টওয়্যার।
(খ) অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার (Application Software): এই সফ্টওয়্যার নির্দিষ্ট কাজ বা ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হয়।
উদাহরণ:
- অফিস কাজের জন্য: Microsoft Word, Excel, PowerPoint।
- গ্রাফিক্সের জন্য: Adobe Photoshop, CorelDRAW।
- যোগাযোগের জন্য: Zoom, Skype।
- বিনোদনের জন্য: VLC Media Player, গেমস।
(গ) প্রোগ্রামিং সফ্টওয়্যার (Programming Software): এই সফ্টওয়্যার ডেভেলপারদের কোড লেখার, পরীক্ষা করার এবং সফ্টওয়্যার তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ:
- কোড লেখার জন্য: Python, Java, C++।
- IDE (Integrated Development Environment): Visual Studio, Eclipse।
6️⃣ ইন্টারনেট এবং নেটওয়ার্কিং
ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বেসিক কিছু জেনে নেয়া যাক:
1. ইন্টারনেট কী?
- এটি একটি বিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যা সারা বিশ্বের মানুষকে সংযুক্ত করে।
- উদাহরণ: Google, YouTube, Facebook ব্যবহার করা মানেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা।
2. নেটওয়ার্ক কী?
- একাধিক কম্পিউটার বা ডিভাইস যখন একে অপরের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সংযুক্ত থাকে, তখন সেটাকে নেটওয়ার্ক বলে।
- উদাহরণ: স্কুলের ল্যাবের সব কম্পিউটার যখন একসাথে কাজ করে।
3. নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ
- LAN (Local Area Network): একটি ছোট এলাকা (যেমন: স্কুল, অফিস)
- WAN (Wide Area Network): বৃহত্তর এলাকা (যেমন: ইন্টারনেট)
- MAN (Metropolitan Area Network): একটি শহরের মধ্যে
4. ইন্টারনেটের সুবিধা
- তথ্য খোঁজা (Google)
- শিক্ষা (Online class)
- যোগাযোগ (Email, WhatsApp)
- বিনোদন (YouTube, Facebook)
5. নেটওয়ার্ক ডিভাইস
- Router: ইন্টারনেট সংযোগ ভাগ করে
- Modem: ইন্টারনেট সংযোগ তৈরি করে
- Switch/Hub: একাধিক কম্পিউটার সংযুক্ত করে
6. IP Address কী?
- প্রতিটি ডিভাইসের নিজস্ব একটি সংখ্যা যা নেটওয়ার্কে তাকে চিনতে সাহায্য করে।
7. Wi-Fi ও Broadband
- Wi-Fi: বেতার নেটওয়ার্ক, মোবাইল বা ল্যাপটপে ব্যবহার করা যায়
- Broadband: উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ
8. ব্রাউজার কী?
- ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার (যেমন: Chrome, Firefox)
9. URL ও Website
- URL: ওয়েবসাইটের ঠিকানা (যেমন: www.google.com)
- Website: ইন্টারনেটে পাওয়া যায় এমন পেজগুলোর সমষ্টি
10. ইন্টারনেট নিরাপত্তা
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার
- ফিশিং থেকে সতর্ক থাকা
- অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা
7️⃣ ফাইল এবং ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট
ফাইল ও ডকুমেন্ট সম্পর্কে বেসিক কিছু ধারনা প্রথমেই নিয়ে নেয়া উচিত:
1. ফাইল ও ফোল্ডার কী তা বোঝা
- ফাইল: যেকোনো তথ্য সংরক্ষণের একক (যেমন: .docx, .pdf, .jpg)
- ফোল্ডার: ফাইলগুলোকে সাজিয়ে রাখার পদ্ধতি
2. নিয়মিত ও অর্থপূর্ণ নামকরণ
- ফাইল ও ফোল্ডারকে এমন নাম দিতে হবে যাতে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন:
❌ new1.docx
3. সঠিক ফোল্ডারে সংরক্ষণ
এক বিষয়ের ফাইলগুলো এক ফোল্ডারে রাখা উচিত, যেমন:
4. ফাইল ফরম্যাট সম্পর্কে ধারণা
.docx
,.pdf
,.jpg
,.xlsx
,.pptx
– এগুলোর ব্যবহারের পার্থক্য জানা উচিত।
5. ফাইল সার্চ ও ফাইল এক্সটেনশন চেনা
- Windows বা Mac-এ ফাইল খুঁজতে কীভাবে সার্চ করতে হয় তা শেখা উচিত।
- .pdf, .mp3 ইত্যাদি এক্সটেনশন দেখে ফাইলের ধরণ বুঝতে হবে।
6. ফাইল কপি, কাট, পেস্ট ও ডিলিট শেখা
- File Explorer ব্যবহার করে কীভাবে ফাইল মুভ বা কপি করতে হয়, সেটা জানা দরকার।
7. ফাইল ব্যাকআপ রাখা
- Google Drive, Dropbox বা পেনড্রাইভে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের কপি রাখা উচিত।
8. ফাইল কমপ্রেস ও আনজিপ শেখা (.zip)
- একাধিক ফাইলকে একত্রে সংরক্ষণ বা পাঠাতে .zip ফরম্যাট ব্যবহার করা হয়।
9. প্রিন্ট করার জন্য ফাইল প্রস্তুত করা
- কোনো ফাইল প্রিন্ট দেওয়ার আগে Page Setup, Margin, Orientation চেক করতে হয়।
10. ফাইল শেয়ারিং শেখা (Email/Cloud)
- ফাইল কীভাবে ইমেইলে অ্যাটাচ করা হয় বা Google Drive থেকে লিংক দিয়ে শেয়ার করা হয়।
8️⃣ কম্পিউটার নিরাপত্তা
1. পাসওয়ার্ড সুরক্ষা
- শক্তিশালী ও ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করো (যেমন: A@5gT9!x)
- কখনো কারও সঙ্গে পাসওয়ার্ড শেয়ার করো না
- নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করো
2. অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার
- কম্পিউটারে ভালো একটি অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করো
- নিয়মিত আপডেট রাখো
- স্ক্যান করে ভাইরাস খুঁজে বের করো
3. ফিশিং থেকে সাবধান
- অপরিচিত ইমেইলে থাকা লিংক বা ফাইল ক্লিক করো না
- কোনো ইমেইল বা ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্য (পাসওয়ার্ড, ব্যাংক তথ্য) শেয়ার করো না
- অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপস নিয়মিত আপডেট করো
- পুরনো ভার্সন ব্যবহার করলে নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ে
5. ব্যাকআপ রাখা
- গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়মিত অন্যত্র ব্যাকআপ রাখো (যেমন: Google Drive, Pen Drive)
- ভাইরাস বা হার্ডডিস্ক সমস্যা হলে ডেটা রক্ষা পাবে
6. নিরাপদ Wi-Fi ব্যবহার
- খোলা (public) Wi-Fi ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকো
- নিজের Wi-Fi তে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দাও
7. স্ক্রিন লক
- কম্পিউটার থেকে উঠলে স্ক্রিন লক করে রাখো
- বিশেষ করে যদি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে এমন জায়গায় থাকো
0 Comments